বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:দিলীপ ঘোষকে তলব বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। আর তা নিয়েই পশ্চিমবাংলায় বিজেপির অন্দর মহলে জল্পনা তীব্র হয়েছে। যদিও দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠদের দাবি, দিল্লিতে এক সপ্তাহ ধরে বৈঠক চললেও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি দিলীপবাবুর। তাই সময় পেয়ে এখন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন নাড্ডা। সেইজন্যই ডেকে পাঠিয়েছেন তাঁকে।
কিন্তু দিলীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠদের এই সাফাই মানতে রাজি নন মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ থেকে শুরু করে দলেরই একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে বিজেপি যতখানি এগিয়ে গিয়েছিল, এখন ঠিক ততটাই পিছিয়ে পড়ছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী (এবং তৃণমূল সরকারও) যে সব ভুল করে চলেছেন, সেই ভুলগুলিকে কাজে লাগাতে পারলে রাজ্যবাসীর মনে বিজেপির জায়গা আরও মজবুত হয়ে যেত। আর এই ব্যর্থতার জন্য তাঁরা দায়ী করছেন স্বয়ং দিলীপ ঘোষকেই। রাজ্য সভাপতি হিসেবে তিনি নাকি এখন স্বেচ্ছাচারীর মতো চলছেন। নিজের ঘনিষ্ঠদের নিয়ে রাজ্যে দল চালাতে চাইছেন। ফলে অনেক সক্রিয় নেতাই আড়ালে চলে যাচ্ছেন। এ ছাড়া দলের মধ্যেই এখন অনেক উপদল তৈরি হয়ে গিয়েছে। এইজন্যেও তাঁরা দিলীপ ঘোষের আচরণকেই দায়ী করেছেন।
অনেকের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের ইঙ্গিতবহ সমালোচনা করে থাকেন। এর ফলে দলের মধ্যেই অনেক নেতা অসম্মানিত বোধ করছেন। তাঁদের অনেকে তৃণমূল থেকে এসেছেন। তাই তাঁদের কেউ কেউ এখন তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। এমনকী, দিল্লিতে সপ্তাহব্যাপী বৈঠকে মুকুল রায়ের সঙ্গেও বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন দিলীপ। ফলে রাগ করে মুকুল রায় কলকাতায় ফিরে আসেন। যদিও সংবাদ মাধ্যমের কাছে কলকাতায় ফিরে যাওয়ার কারণ হিসেবে মুকুল রায় চোখের চিকিৎসার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই প্রসঙ্গে দিলীপবাবু যে প্রতিক্রিয় জানিয়েছিলেন, তা আপত্তিকর বলেও অনেকে মনে করছেন। সূত্রের খবর, তখনই বিজেপির শীর্ষ নেতাদের কাছে মুকুল রায়ের অসন্তোষের কথা পৌঁছে যায়। এ ছাড়া বাবুল সুপ্রিয়, অর্জুন সিং–সহ বেশ কয়েকজন সাংসদও জাতীয় স্তরে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।
এরই মধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে ফিরতে চেয়ে নিজের মত ঘোষণা করেছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়। শুধু তাই নয়, দলের অভ্যন্তরে তিনিও দিলীপ ঘোষের তীব্র সমালোচনা করেছেন। লকডাউনে বিভিন্ন বিধিনিষেধ চলার সুযোগ নিয়ে শাসক দল হিসেবে তৃণমূল যে ভাবে জনসংযোগ করতে পেরেছে, ঠিক ততটাই দূরে থেকেছে বিজেপি। এর কারণ যদিও পুলিশ ও প্রশাসনের অসহযোগিতা। কিন্তু এর মোকাবিলায় বিজেপি ভিন্ন কোনও পথ খুঁজে পায়নি। এদিক থেকে রাজ্য সভাপতি হিসেবে নতুন পথ বাতলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ দিলীপ ঘোষ। যদিও তিনি সংবাদ মাধ্যমে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে নিয়মিত সমালোচনা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তা সরাসরি জনসংযোগের কতখানি বিকল্প হতে পারে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলেরই একাংশের।
যদিও এইসব যুক্তি উড়িয়ে দিচ্ছেন দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ নেতারা। তাঁরা পরিষ্কার বলছেন, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা যে পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, তা মানুষ বুঝতে পেরে গিয়েছে। তারা আরা তৃণমূলকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু প্রতিদিন যে ভাবে দলে দলে বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন, তা অন্য ইঙ্গিতই দিচ্ছে। সেই খবরও দলের শীর্ষ নেতারা জেনে গিয়েছেন। এ ছাড়া দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও তীব্রতা এখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে তাঁদের কাছে। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিলীপ ঘোষকে দিল্লিতে তলব করায় বিতর্ক অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। বিষয়টি দিলীপ ঘোষের ওপর চাপ তৈরি করবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।